সেই চিঠিগুলো

"চিঠিগুলো যেখানে থেমে ছিল"

বৃষ্টি নামছিল সেই বিকেলেও - ঠিক আজকের মতোই। কলেজ লাইব্রেরির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি একটু একটু ভিজতে শুরু করেছি। হঠাৎ মাথার ওপর ছায়া পড়ল - একটা ছাতা। পিছনে ফিরে দেখি অর্ণব। ওর চোখে সেই পুরনো দুষ্টু হাসি, "এতো আমাদের বাংলা মিসের প্রিয় ছাত্রী! বৃষ্টিতে ভিজবে নাকি?"

আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম, "তোমার ছাতা ফিরিয়ে নাও।"
ও হেসে বলল, "না, এটা তুমিই রাখো। আমার হোস্টেলে আরেকটা আছে।"

সেই নীল ছাতাটা আজও আছে আমার আলমারিতে? কোণায় ছোট একটা স্টিকার, তাতে লেখা: "অর্ণব + তৃষা = প্রেম"

পাঁচ বছর পর।

আমি এখন একটা পত্রিকায় লিখি, একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে চোখে পড়ল এক বিশাল পোস্টার "অর্ণব ঘোষের প্রথম উপন্যাসের মুক্তি অনুষ্ঠান"

হৃদয়টা যেন হঠাৎ থেমে গেল? ফোনে সার্চ করলাম। হ্যাঁ, সেই অর্ণবই। ছবিতে ওর মুখে এখন হালকা দাড়ি, চোখে সেই চেনা দুষ্টুমি এখনও।

অনুষ্ঠানের দিন লিটারেরি ক্লাবে গেলাম। অনেক ভিড়। এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ মাইক্রোফোনে ভেসে এলো পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর

"ধন্যবাদ সবাইকে। এই উপন্যাসটা আসলে আমার কলেজ ডায়েরি থেকে জন্ম নিয়েছে..."

আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে, কিন্তু ও আমাকে দেখছে না। অনুষ্ঠান শেষে সবাই ঘিরে ধরল ওকে, আর আমি চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে এলাম। বৃষ্টি আবার পড়তে শুরু করেছে।

পুরুনো চিঠিগুলো Meghmala Diary

হঠাৎ পিছন থেকে এক গলা, "এতো তৃষা?"
আমি চমকে ফিরলাম - অর্ণব।

"হ্যাঁ," একটু হেসে বললাম, "অনেক দিন পর।"
ও অবিশ্বাসের চোখে, "তুমি এখানে?"
"তোমার পোস্টার দেখে চলে এলাম," বললাম আমি।
অর্ণব বলল, "চলো, ওই কফি শপে বসি।"

কফির কাপে বাষ্প উঠছে - অর্ণব জিজ্ঞেস করল, "তুমি এখন কি করো?"
"পত্রিকায় কাজ করি, আর... তোমার জন্য কিছু এনেছি।"

ব্যাগ থেকে একটা পুরনো ডায়েরি বের করে দিলাম। ও খুলতেই বেরিয়ে এলো একগুচ্ছ চিঠি।
"এগুলো...?"
"তুমি আমাকে কলেজে যত চিঠি দিয়েছিলে, সব। ফেরত দিইনি কখনো," বললাম আমি।

ও এক এক করে চিঠি দেখছিল। শেষ চিঠিতে লেখা ছিল: "তৃষা, কাল যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে লাইব্রেরির বারান্দায় দেখা করবো? হ্যাঁ/না লিখে ফেরত দিও।"

অর্ণব আমার দিকে তাকাল, "তুমি কখনো উত্তর দাওনি।"
আমি হাসলাম, "দিয়েছিলাম। সেদিনই তো তোমার ছাতা নিয়ে গিয়েছিলাম না?"

ও আমার হাত চেপে ধরল, "আজকে যদি আবার বলি?"
বাইরের বৃষ্টির শব্দ জানালায় সুর তুলে বাজছে।

আমি চোখে চোখ রেখে বললাম, "হ্যাঁ, এবার আর চিঠির অপেক্ষা করতে হবে না।"

[সমাপ্ত]
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url