অনেক দিন পরে
স্কুল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিকেলের হালকা রোদ মাথায়। পাশে সেই পুরনো আমগাছটা - এখনো আছে, শুধু পাতাগুলো ঘন হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল, এই গাছের নিচেই বসে গল্প করতাম - আমি, রিয়াদ আর তানিয়া।
কেউ ডাকে পিছনে ফিরে দেখি,
"সিয়াম!"
এক সেকেন্ডেই চিনে ফেললাম - রিয়াদ। একটু পাল্টেছে, গালে দাড়ি, চোখে চশমা। কিন্তু ওর সেই হাসিটা একদম আগের মতোই রয়ে গেছে।
"কতদিন পর রে!" বলে আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
"তুই একেবারে হারিয়ে গেলি! ফেসবুকেও নাই।"
"ব্যস্ততা তো আর ফাঁকা রাখে না ভাই। তুই এখন কি করিস?" - আমি জানতে চাইলাম।
"ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ, এখন চাকরি করি। তানিয়ার কথা জানিস?"
তানিয়ার নাম শুনেই বুক ধক করে উঠল, সেই স্কুলজীবনের অনুভূতি - যেটা কখনো মুখে বলা হয়নি। মনে পড়ল ওর কালো চোখ, লম্বা চুল... এখনো আছে তো?
"না, যোগাযোগ নেই," - মিথ্যে বললাম। আসলে খোঁজ রাখিনি ইচ্ছে করেই।
"চল, সবাই আসবে আজ। তানিয়াও।"
"সত্যি বলছিস?" - আমি অবাক।
"আজ আমাদের রিইউনিয়ন, তুই জানিস না?"
আমি মাথা নাড়তেই ও আমাকে টেনে স্কুলের ভেতর নিয়ে গেল।
স্কুলের করিডোর যেন পুরনো দিনগুলো ফিরিয়ে আনল। হঠাৎ করিডোরের শেষে সেই মুখ - তানিয়া। ছোট চুল, কিন্তু চোখের দীপ্তি আগের মতোই।
"সিয়াম?" - ওর কণ্ঠে অবিশ্বাস।
"তানিয়া, অনেকদিন পর।"
"তুমি আগের মতোই আছো।"
"তুইও," - বললাম আমি, যদিও বদলটা চোখে পড়ছিল।
রিয়াদ বুঝে গেল পরিস্থিতি, "চলো, সবার সঙ্গে দেখা করি।"
বেঞ্চে বসে আমরা চুপ। তানিয়া বলল, "তুমি কি ভেবেছিলে, আবার কখনো দেখা হবে?"
"না, ভেবেছিলাম স্কুল শেষ মানেই সব শেষ।"
"আমরা কতটা ছোট ছিলাম!"
"তানিয়া, আমি তোকে একটা কথা কোনোদিন বলিনি..."
"কি?" - ওর চোখে জিজ্ঞাসা।
"তোকেই ভালোবাসতাম।"
ও মৃদু হাসল, "আমিও।"
"তুই তো কখনো কিছু বলিসনি। আমি ভেবেছিলাম, তুই কেবল বন্ধু হয়ে থাকতে চাস।"
"এখন কি দেরি হয়ে গেছে?" - আমি জিজ্ঞেস করলাম।
"কালকে ফোন দিও। পুরনোটা না পারলেও, নতুন কিছু তো শুরু করতে পারি।"
হয়তো জীবনের সব কিছুরই সময় থাকে। আমাদের সময়টা বুঝি এখনই।
বাইরে সন্ধ্যার তারা জ্বলছে, বাতাসটা যেন অনেক বছরের অপেক্ষার শেষচিহ্ন নিয়ে এল।