অন্তরের গহীনে

•|• প্রথম অধ্যায়: শুরুর আভাস •|•

বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আরিফের। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখল, আকাশ কান্নায় ভেজা। ঠিক যেমন তার মনটা এখন। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, তিনটা মিস কল~সবই নাবিলার। কি যেন একটা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু আরিফ তখন নিজের ভূবনে হারিয়ে।

নাবিলা। নামটা মনে হলেই বুকের ভেতর কেমন যেন করে ওঠে। এত বছর পরও কেন এই অনুভূতি? কলেজ লাইফের সেই সহজ, আনন্দময় দিনগুলো মনে পড়ে যায়। নাবিলা ছিল তার ক্লাসমেট, বন্ধু, আর... হয়তো আরও কিছু, যা কখনোই বলা হয়নি।

ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় বের হলো, বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজতে ভিজতে ডায়াল করল নাবিলার নাম্বার। একটা গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "হ্যালো?"

"অবশেষে ফোন ধরেছ?" নাবিলার কণ্ঠে খানিকটা রাগ, খানিকটা অভিমান।

"Sorry... ব্যস্ত ছিলাম," মিথ্যা বলল আরিফ।

"ব্যস্ত নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছ?" নাবিলার প্রশ্নে চুপ করে গেল আরিফ।

বৃষ্টি আরও জোরে পড়তে শুরু করল - মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি যেন তাদের কথোপকথনের সাক্ষী হয়ে আছে।

Deep Within the heart

•|• দ্বিতীয় অধ্যায়: ফিরে যাওয়া •|•

আরিফ আর নাবিলার সম্পর্কটা কখনোই সাধারণ ছিল না। কলেজের শেষ বছরে তারা একসাথে প্রজেক্টে কাজ করত | দিনের পর দিন ল্যাবে সময় কাটাত, রাত জেগে ডাটা এনালাইসিস করত। সেই সময়টায় নাবিলার দিকে তাকালে আরিফের মনে হত, এই মেয়েটি যেন আলাদা কোনো গ্রহ থেকে এসেছে। তার চোখে স্বপ্নের ঝিলিক, কথায় আত্মবিশ্বাসের ছাপ।

কিন্তু আরিফ কখনোই নিজের মনের কথাগুলো খুলে বলেনি। ভেবেছিল, সময় আসবে, সব বলা হয়ে যাবে। কিন্তু সময় তো কাউকে অপেক্ষা করায় না। কলেজ শেষ হতেই নাবিলা চলে গেল বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য | আরিফ থেকে গেল দেশে, চাকরির চাকচিক্যে।

কিন্তু দূরত্ব কি অনুভূতিকে মেরে ফেলে? নাবিলার চিঠিগুলো, মেসেজগুলো আরিফের ফোনে জমা হতে থাকল | প্রথমে নিয়মিত রিপ্লাই দিত, পরে ক্রমশ কমে এল। ভেবেছিল, দূরত্ব আর সময়ের সাথে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। কিন্তু নাবিলার শেষ মেসেজটা তাকে নাড়া দিয়েছিল -

"আরিফ, তুমি কি কখনো ভেবে দেখেছ, আমরা কেন এত কাছাকাছি থেকেও এত দূরে?"

•|• তৃতীয় অধ্যায়: মুখোমুখি •|•

বৃষ্টি থেমে গেছে! কফি শপের কর্নারে বসে আছে আরিফ। দরজা খুলে নাবিলা ভেতরে ঢুকল ~ পাঁচ বছর পর দেখা। তার চোখে এখনও সেই পুরনো আভা, শুধু যোগ হয়েছে কিছুটা পরিণতির ছাপ।

"তুমি কি বদলাও'নি," হেসে বলল নাবিলা।

"তুমিও না," জবাব দিল আরিফ।

কথায় কথায় জানা গেল, নাবিলা এখন একজন সফল রিসার্চার। বিদেশে ভালো চাকরি, জীবনটা সাজানো। কিন্তু কেন ফিরে এল?

"কারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই," সরাসরি বলল নাবিলা। "তুমি কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছিলে?"

আরিফের গলা শুকিয়ে গেল। এই প্রশ্নের উত্তর সে নিজেকেও দেয়নি কখনো।

bangla romantic story

•|• চতুর্থ অধ্যায়: উত্তর খোঁজা •|•

সেই রাত আরিফ কাটাল পুরনো ডায়েরিগুলো ঘেঁটে। নাবিলার দেওয়া ছোট নোট, ফটোগুলো ~ সবই সাক্ষী দিচ্ছিল এক অকথিত ভালোবাসার। হয়তো সে ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিল, সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে যদি feelings admit করে।

পরের দিন সকালে নাবিলার বাসায় গেল আরিফ। দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, "আমি জানি না ভালোবাসা কি। কিন্তু আমি জানি, তুমি ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ।"

নাবিলার চোখে পানি। "দেরি হয়ে গেছে, আরিফ।"

"না, এখনও নয়!" জোর দিয়ে বলল আরিফ। "সময় আমাদেরকে শিখিয়েছে সম্পর্কের মূল্য। এবার শেখার পালা।"

•|• শেষ অধ্যায়: নতুন শুরু •|•

সম্পর্কের গভীরতা শুধু মিষ্টি কথায় নয়, বোঝাপড়ায়, ত্যাগে‌ | আরিফ আর নাবিলা বুঝতে পেরেছিল, দূরত্ব কখনোই ভালোবাসার মাপকাঠি নয়।

আজ তাদের বিয়ের এক বছর পূর্তি। ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে তারা আকাশের দিকে তাকাল। নাবিলা বলল, "মনে আছে, তুমি বলেছিলে ~ সময় আমাদের শিখিয়েছে?"

"হ্যাঁ, আর এখন আমরা শিখিয়েছি সময়কে," হেসে বলল আরিফ।

সম্পর্কের গভীরতা হলো ~ একটা অসমাপ্ত গল্পকে সম্পূর্ণ করা।

•|• Happy Ending •|•

•||• আমাদের প্রতিটি গল্পের চরিত্র কাল্পনিক •||•

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url