চোখে চোখ রেখে

রিদিতা কফি শপের কর্নারে বসে বই পড়ছিল। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল, আর জানালা দিয়ে ভেজা গন্ধ ভেসে আসছিল? তার মাথার ওপর ঝুলন্ত বাল্বের আলোটা একটু নরম, ঠিক যেনো পুরানো দিনের ফিল্মের সিনের মতো। সে চশমাটা ঠিক করে আবার বইয়ে ডুবে যাওয়ার আগে চোখ তুলে দেখল-একজন ছেলে দরজায় দাঁড়িয়ে।

নীল রেইনকোট, ভিজে চুল, আর হাতে একটা পুরানো ক্যামেরা।

রিদিতা তাকে আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু ওই মুহূর্তে তার মনে হলো, এই মানুষটার গল্পটা জানা দরকার।

ছেলেটার নাম আরিয়ান? সে প্রতিদিন এই কফি শপে আসে, একই টেবিলে বসে, ক্যামেরা দিয়ে রাস্তার মানুষদের ছবি তোলে- রিদিতা লক্ষ করল, তার আঙুলগুলো লম্বা, আর কাজ করার সময় ভ্রু কুঁচকে যায়। একদিন সাহস করে তার টেবিলে গিয়ে বলল, "আপনার ছবিগুলো দেখতে পারি?"

আরিয়ান চমকে উঠল, তারপর হাসি দিয়ে বলল, "তুমি তো আমার প্রথম দর্শক।"

তার ক্যামেরার স্ক্রিনে একের পর এক ছবি-ভিজে রাস্তায় ছাতা ধরা এক বুড়ো, ফুটপাথে বসে আইসক্রিম খাওয়া একটা মেয়ে, আর... হঠাৎ একটা ছবি এসে থামল-রিদিতা, বই পড়ার অবস্থায়, জানালার পাশে।

"এটা কখন তুললেন?" রিদিতা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।

"যখন তুমি লক্ষ করছিলে না," আরিয়ান বলল, "সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো আসলে তখনই ধরা পড়ে, যখন কেউ জানেই না যে তাকে দেখা হচ্ছে।"

couples Love Story bangla

দিন যায়। রিদিতা আর আরিয়ানের কথোপকথন বই, ছবি, আর রাস্তার গল্পে ভরে উঠতে থাকে। একদিন বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় আরিয়ান হঠাৎ রিদিতার হাত ধরে ফেলে।

"একটু দাঁড়াও," সে বলে, "এই মুহূর্তটা চাই।"

তারপর ক্যামেরা তুলে রিদিতার ভিজে চুল, হাসি, আর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "পেরফেকশন।"

রিদিতা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়, কিন্তু হাতটা আর ছাড়তে চায় না।

কিন্তু গল্প সবসময় সহজ হয় না? আরিয়ানের একটা পুরানো প্রেমিকা ফিরে আসে, যে তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চায়। রিদিতা জানে, আরিয়ান সবসময়ই বড় স্বপ্ন দেখে - নিউ ইয়র্কের গলি, প্যারিসের স্টুডিও।

এক রাতে, তারা পার্কের বেঞ্চে বসে। আরিয়ান বলে, "তুমি কি মনে করো, সময় আসলে কাউকে থামিয়ে রাখে?"

রিদিতা জবাব দেয়, "না। কিন্তু কিছু মানুষ সময়ের থেকেও দামি।"

আরিয়ান চলে যায়? রিদিতা আবার একা হয়ে যায়, কিন্তু এবার তার মনে হয়, কিছু মানুষ আসে শুধু তোমাকে দেখিয়ে দিতে যে তুমি কতটা সুন্দর হতে পারো।

বছরখানেক পরে, রিদিতার টেবিলে একটা প্যাকেজ আসে - একটা বই, আরিয়ানের তোলা সব ছবি দিয়ে বানানো। শেষ পৃষ্ঠায় লেখা:

"তোমার চোখেই আমার সবচেয়ে সুন্দর ফ্রেম ছিল।"
আর নিচে একটা ঠিকানা-নিউ ইয়র্কের একটা গ্যালারি, যেখানে আরিয়ানের প্রথম একক প্রদর্শনী হবে।

রিদিতা হাসে। হয়তো গল্পটা এখানেই শেষ নয়...

সমাপ্ত
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url