যদি কখনো

[প্রথম পর্ব: ভাঙ্গা ঘড়ির গল্প]

ঘড়িটা ভাঙ্গা! ঠিক মনে নেই কবে থেকে এর কাঁটা ৩টা ৪৫-এ আটকে আছে | ওই সময়টায় কি হয়েছিল? তুমি হয়তো ভুলে গেছ, কিন্তু আমি মনে রাখি? সেদিন দুপুরবেলা রোদ্দুর মাথায় চড়ে বসেছিল জানালার গ্রিলে| তুমি আমার ডায়েরির পাতায় লাল কালি দিয়ে লিখেছিলে- ✍🏻..... আজ বৃষ্টি নামবে না, কিন্তু মেঘ দেখতে পাচ্ছি তোমার চোখে |

আমি হেসে 😊 বলেছিলাম, == এটা কবিতা নাকি ভবিষ্যতবাণী? == তুমি ডায়েরি টেনে নিয়ে বলেছিলে, /** এটা একটা প্রতিজ্ঞা | যেদিন এই ঘড়ি আবার চলা শুরু করবে, সেদিন আমি? ** /

বাকিটা শেষ করোনি। আজও জানি না কি বলতে চেয়েছিলে তুমি | হয়তো বলতে চেয়েছিলে - সেদিন আমি চলে যাব | নাকি বলতে চেয়েছিলে - সেদিন আমরা নতুন করে শুরু করব?

[দ্বিতীয় পর্ব: বৃষ্টিভেজা চিঠি]

বৃষ্টি নামলে আমার পুরনো জখমগুলো টনটন করে। ডাকবাক্সে তোমার শেষ চিঠিটা এখনও পড়ে আছে। খামের উপর লাল কালিতে লেখা- === জরুরি না পড়া? === কত রাত জেগে ভেবেছি তোমার দেওয়া চিঠিতে কি লেখা আছে |

  • * খুলে পড়লে কি পাব?
  • * হয়তো লিখেছ: (আমি আর ফিরব না)
  • * নাকি লিখেছ: (একদিন সব বলব)
  • গত বর্ষায় খামটা একবার ভিজে গিয়েছিল। কালি ছড়িয়ে গেছে ঠিক যেখানে তুমি লিখেছিলে আমার নাম। মনে হলো নামটা যেনো কাঁদছে। 😭

    [তৃতীয় পর্ব: কফিশপের শেষ টেবিল]

    শহরের শেষ কফিশপটায় আমরা বসে গল্প করতাম | তুমি বলতে- /*== এটাই আমাদের গোপন স্থান, এখানে সময় থেমে থাকে। ==*/ আজ সেখানে নতুন মেয়েটি কাজ করে | তোমার প্রিয় চেয়ারটায় এখন এক অচেনা মানুষ কফির কাপে চুমুক দেয়। মেয়েটি জিজ্ঞেস করেছিল- (আপনার সেই বন্ধু কোথায়? যে ল্যাটে আসলে অনেক কথা বলত) আমি মিথ্যা বলেছিলাম | ***সে বিদেশে চলে গেছে*** সত্যি বললে? সত্যি বললে তো অনেক কিছু স্বীকার করতে হয় | **আমি নিজেই জানি না তুমি এখন কোথায়**

    [চতুর্থ পর্ব: রাতের ট্রেন]

    রাত ১১:৪৫ এর ট্রেনটা যখন হুইসেল দেয়, তখন তোমার ফোন আসে | শুধু এক সেকেন্ড। শুনি শুধু ট্রেনের শব্দ। জানি এটা তুমি। তুমি কি জানো? এই ট্রেন লাইনের শেষ প্রান্তে একটা জংধরা স্টেশন আছে । সেখানে এক পাগলাটে বুড়ো টিকিট বিক্রি করে, সে বলে! ***যারা হারিয়ে যায়, তারা সবাই একদিন এখানে এসে থামে*** আমি কখনও যাইনি? ভয় পাই- যদি সেখানে গিয়ে দেখি! তুমি সত্যিই টিকিট কিনতে দাঁড়িয়ে আছ?

    [পঞ্চম পর্ব: অবেলার সংগ্রহ]

    তুমি বলেছিলে! ***তোমার সব ক্লান্ত মুহূর্ত আমি জমা রাখব?*** আজ সেটা আমার সংগ্রহে আছে |

  • ১. ভাঙা ঘড়ির কাঁটা (৩টা ৪৫ মিনিট)
  • ২. বৃষ্টিভেজা চিঠির খাম
  • ৩. কফিশপের রিসিট (১৫ই ডিসেম্বর, ২০২২)
  • ৪. ট্রেনের টিকিট (সিট নং- তোমার জন্মদিন)
  • এগুলো কি যথেষ্ট? নাকি আরও কিছু দরকার?

    [ষষ্ঠ পর্ব: যদি কখনো...]

    যদি কখনো ফিরে আসো!

  • ১. প্রথমে ঘড়িটা ঠিক করব
  • ২. তারপর জিজ্ঞেস করব- ***৩টা ৪৫ মিনিটে কি হয়েছিল মনে আছে?***
  • ৩. শেষে সেই চিঠিটা খুলে পড়ব- কি লেখা ছিলো সেটাতে।
  • তুমি যদি না আসো? তাহলে একদিন ট্রেনে চড়ে বসব | যাব জংধরা স্টেশনে? সেখানে গিয়ে বুড়োকে জিজ্ঞেস করব- /*=== এখানে কি এক মেয়ে এসেছিল? যে অপরিচিত ভাষায় গান গাইত? ===*/

    [শেষ পর্ব: সময় যা বলতে দেয়নি]

    সময় আমাদের কিছু কথা বলতে দেয়নি। যেমন! সেদিন রোদে তুমি যখন হাসছিলে, আমি কাঁদছিলাম তুমি যখন বলেছিলে *"ভালোবাসি"*, আমি শুনেছিলাম *"বিদায়"* আজ যখন ট্রেনের হুইসেল বাজে, তুমি কি শুনতে পাও আমার নাম? আমার অবেলায় ক্লান্ত মুহূর্তগুলো...? তুমি যদি সত্যিই রেখে দিতে তাহলে হয়তো আজ ঘড়িটা আবার চলত। তবুও অপেক্ষায় তোমার?
    [সমাপ্ত]

    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url